Sunday, April 10, 2011

বর্ষবরণে চারুকলার প্রস্তুতি

মাত্র তিন দিন বাদেই আসছে বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। বৈশাখকে ঘিরে নগরীর নানা উৎসব-অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলেও দেশে বর্ষবরণের সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকেই অনুষদের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মিলিত প্রয়াসে বর্ষবরণের প্রস্তুতি চলতে থাকে। চারুকলার বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থী ও সাবেক শিক্ষার্থীদের মিলনমেলায় এ সময় জমজমাট হয়ে উঠে চারুকলা প্রাঙ্গণ। বর্ষবরণ প্রস্তুতির জন্য ইতোমধ্যেই চারুকলার শিক্ষার্থীরা জোরেশোরে মাঠে নেমেছেন। সময় স্বল্পতায় বেশিরভাগ ক্লাসই বন্ধ রেখে বৈশাখ প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হচ্ছে। আনুষ্ঠানিকভাবে ১ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ১৪১৮-এর বর্ষবরণ প্রস্তুতির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। গতকাল চারুকলা অনুষদে গিয়ে দেখা যায়, প্রবেশমুখেই শিক্ষার্থীরা তৈরি করছেন রঙিন মাটির সরা ও বিভিন্ন সামগ্রী। উৎসাহ নিয়ে বিক্রি করছে সে সামগ্রী। দূর-দূরান্ত থেকে আগত আগ্রহী দর্শকদের অনেকেই বৈশাখে প্রিয়জনকে উপহার দিতে কিনে নিয়েছেন বাহারি সামগ্রী। অল্প দূর এগোতেই চারুকলার মাঠে শিক্ষার্থীদের বিশালআকৃতির ময়ূর, কাকাতুয়া, বাঘ তৈরিতে ব্যস্ত দেখা যায়। মাঠের পাশের রুমগুলোতে একদল শিক্ষার্থী তুলির আঁচড়ে রাঙিয়ে তুলছিলেন রঙিন মুখোশ। বারান্দায় বসে মাটি ও কাগজ দিয়ে রাজা রানীর আদলে ভাস্কর্য তৈরি করছিলেন অপর শিক্ষার্থীরা।
মনের খোরাক মেটাতে প্রতি বৈশাখেই চারুশিল্পী ও চারু শিক্ষার্থীরা মাটির সরা, মুখোশ, জলচিত্র ও মাটির টেপা পুতুলে ফুটিয়ে তোলেন নকশা। শিক্ষার্থীরা জানান, সুন্দর এই সামগ্রী তৈরি করা হয় বিক্রির উদ্দেশ্যে। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি করে গঠিত হয় ফান্ড। ফান্ডের টাকা দিয়ে বৈশাখের ১৫ দিন পর চারুকলা ইনস্টিটিউটে উদযাপিত হয় পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান। বেচে যাওয়া অবশিষ্ট অর্থ দিয়ে পরবর্তী বছরের বৈশাখ উদযাপনের জন্য তৈরি হয় ফান্ড। এ বছর বর্ষবরণ প্রস্তুতিতে চারুকলা অনুষদের ১০ম ব্যাচ থেকে ১৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছে। শিক্ষার্থীরা জানান প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত কাজ করলেও বৈশাখের দুই দিন আগে তাদের রাত জেগে বৈশাখের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হয়।
চারুকলার ইনস্টিটিউটের ১৪১৮ সালে বর্ষবরণ প্রস্তুতির অন্যতম আকর্ষণ তার মঙ্গল শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রায় এ বছরের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে তৈরি করা 'প্রতীকী কুমির'। জানা যায়, কুমিরটির উপর প্রতীকী অর্থে বসে থাকবে বাঁশের তৈরি কিছু মানুষ। এই মানুষদের হাতে থাকবে কুমির বধের অস্ত্র। চারুকলার অনুষদের প্রিন্টিং ও ড্রয়িং বিভাগের অধ্যাপক নিসার হোসেইন বলেন, বাঙালি লোককাহিনীতে কুমির বধের কাহিনী রয়েছে। কুমিরটি আমাদের গ্রামীণ লোকশিল্পেরই একটি অংশ। জনগণ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কামনা করেন। এ কথা মাথায় রেখেই এবার মঙ্গল শোভাযাত্রায় যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে প্রতীকী কুমিরটির ব্যবহার করা হয়েছে। এ ছাড়া মঙ্গল শোভাযাত্রায় অন্যান্য আকর্ষণের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন লোকজ পাখি, শোলা ও কাঠের তৈরি রাজা-রানী, বাঘ ও লক্ষ্মীপ্যাচার মুখোশ। রয়েছে কাকাতুয়া, ময়ূর খরগোসের তৈরি বড় বড় শিল্পকর্ম। বৈশাখের দিন সকাল ৯টায় চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে যাত্রা করে মঙ্গল শোভাযাত্রাটি দোয়েল চত্বর, হাইকোর্ট প্রাঙ্গণ, মৎস্য ভবন, শিশু পার্ক ও জাদুঘর হয়ে চারুকলায় এসে শেষ হবে।
গতকাল চারুকলার অনুষদের প্রধান ফটকের সামনেই বৈশাখ প্রস্তুতির ভিন্ন আমেজ চোখে পড়ে। কাচের চুড়ি বিক্রেতা বেদে নারীরা রংবেরংয়ের চুড়ির পসরা সাজিয়ে বসেছেন। তরুণীরা বৈশাখী শাড়ির সঙ্গে মিল রেখে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন হাতভর্তি চুড়ি। বৈশাখ উদযাপনে প্রতিবারের মতো এবারও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। বৈশাখের দিনে ডিআরইউ চত্বরে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত অনুষ্ঠানে অতিথিদের জন্য থাকবে সকালের নাস্তা ও দুপুরের বিশেষ খাবার।

No comments: