পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতীয়দের প্রধান সামাজিক অনুষ্ঠান বৈসাবী শুরু হয়েছে শনিবার থেকে। নতুন বছরকে বরণ এবং পুরনো বছরের বিদায়কে ঘিরে পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র জাতিসত্তাসমূহ নিজস্ব সামাজিক ঐতিহ্য নিয়ে সমন্বিতভাবে বৈসাবী উৎসব পালন করে থাকে। এ উপলক্ষে তিন পার্বত্য জেলায় নেওয়া হয়েছে সপ্তাহব্যাপী নানা কর্মসূচি। বান্দরবান বৈসাবী উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুইটিং মারমা জানিয়েছেন, বৈসাবী উপলক্ষে সাত দিনের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। শনিবার থেকে কর্মসূচি শুরু হলেও মূল অনুষ্ঠান হবে ১২ এপ্রিল থেকে। এ উপলক্ষে রাঙামাটি ক্ষুদ্র আদিবাসীদের সাংস্কৃতিক উৎসব এবং খাগড়াছড়িতে বিভিন্ন খেলাধুলা শুরু হয়েছে। পুরনো বছরকে বিদায় এবং নতুন বছরকে বরণের জন্য মূলত এ উৎসব। পুরনো বছরের সব গ্লানি, দুঃখ-বেদনা ধুয়ে মুছে নতুন বছর যাতে সুন্দর এবং স্বচ্ছন্দময় হয় তার জন্যই সব প্রয়াস। নববর্ষ উৎসবকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠী বিভিন্ন নামে অভিহিত করে থাকে। এ উৎসবটি মারমা ও চাকরা 'সাংগ্রাই', চাকমারা 'বিজু', ত্রিপুরারা 'বৈসু', ম্রোরা 'চাংক্রান', খুমীরা 'সাংক্রাইং', খেয়াংরা 'সাংরান' ও তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠী 'বিষু' নামে পালন করেন। এ উৎসব শুধু উপজাতিরাই নয়, বাঙালিও নানাভাবে পালন করে থাকে। বৈসাবী উৎসবটি দেখার জন্য দেশ-বিদেশের পর্যটকের আগমন ঘটে পার্বত্য চট্টগ্রামে। বিভিন্ন উপজাতি তরুণ-তরুণী ও কিশোর-কিশোরীরা পাহাড়ের স্ব স্ব পল্লীগাঁয়ের জলে ও ঝরনার পানিতে ফুল ভাসায়। পরদিন ঘরে ঘরে উৎসবের মূলবিজু এবং তৃতীয় দিন গোজ্যেপোজ্যে দিন উদযাপিত হয়। মারমাদের সাংগ্রাই উৎসবের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী পানি খেলা। তরুণ-তরুণীরা একে অপরের প্রতি পানি ছুড়ে মেরে পুরনো গ্লানি ধুয়ে ফেলে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়। এদিকে মারমাপ্রধান বান্দরবানে ঐতিহ্যবাহী সাংগ্রাই উৎসব উপলক্ষে সাত দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে দুই দিনব্যাপী জলকেলি বা ওয়াটার ফেস্টিভাল, উপজাতিদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সাংগ্রাই র্যালি ও প্রার্থনাসভা। মারমাদের প্রাচীন ও বিলুপ্তপ্রায় বিভিন্ন খেলা এ উৎসবকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। এ উপলক্ষে বান্দরবানের সাত উপজেলায় উপজাতি পল্লীতে সাজ সাজ রব। সবাই নতুন বছরকে বরণ এবং পুরনো বছরের বিদায়কে ঘিরে মারমারা এ উৎসব পালন করেন। সাংগ্রাই উদযাপন কমিটি সূত্রে জানা গেছে, ১৩ এপ্রি্রল সাংগ্রাই র্যালি, হ্যান্ডবল, ভলিবল, ঘিলা খেলা অনুষ্ঠিত হবে ১৪ এপ্রিল উজানীপাড়া বুদ্ধক্যাংয়ে বুদ্ধপূজা, ১৫ ও ১৬ এপ্রিল জলকেলি বা ওয়াটার ফেস্টিভাল, উপজাতিদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং ১৭ এপ্রিল প্রার্থনার মাধ্যমে শেষ হবে সাংগ্রাই উৎসব। এ ছাড়াও সাংগ্রাই উপলক্ষে উপজাতিরা পিঠা তৈরি উৎসব পালন করেন। সাংগ্রাই উপলক্ষে স্থানীয় বাজারগুলোতে উপজাতি তরুণ-তরুণীরা নতুন সাজ-পোশাক কেনায় ব্যস্ত হয়ে উঠেছে।
No comments:
Post a Comment