Saturday, February 23, 2013

নারীবেষ্টিত গাদ্দাফি

উদ্ভট তথ্য এবং তত্ত্বের উদ্ভাবক ছিলেন লিবিয়ার চার দশকেরও বেশি সময়ের শাসক কর্নেল গাদ্দাফি। পোশাকের ক্ষেত্রে তার রুচি ছিল বিচিত্র। সবসময় থাকত একদল নারী দেহরক্ষীর নিরাপত্তায়। নিজেকে তিনি অভিহিত করতেন আরব নেতাদের নেতা, আফ্রিকার রাজাদের রাজা এবং মুসলমানদের ইমাম বলে। তার প্রতাপ ও দাপটে আফ্রিকার অনেক রাষ্ট্রপ্রধান কাঁপতেন। বৈচিত্র্যে ভরা ছিল তার জীবন। তরুণ সেনা কর্মকর্তাদের নিয়ে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পশ্চিমা সমর্থিত রাজা প্রথম ইদ্রিসকে হটিয়ে ১৯৬৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর ক্ষমতা দখল করেন গাদ্দাফি। জাতীয়তাবাদ ও গণতন্ত্রের ধুয়া তোলে তরুণ গাদ্দাফি নিজেকে দ্রুতই প্রতিষ্ঠা করেন এক বিপ্লবী, অভাবনীয় এবং বর্ণাঢ্য নেতা হিসেবে। নিজেকে মিসরের প্রেসিডেন্ট এবং আরব জাতীয়তাবাদের নেতা গামাল আবদেল নাসেরের অনুসারী হিসেবে প্রচার করেন। প্রচার করেন নিজের ক্ষমতা ও শক্তি। কখনো তিনি নিজেকে দাবি করতেন মাও সে তুং, স্টালিন কিংবা হিটলারের ভক্ত বলে। ১৯৪২ সালে সারতের কাছাকাছি এক মরুভূমিতে বেদুইন তাঁবুতে জন্ম গাদ্দাফির। পশ্চিমারা আরবের বিরুদ্ধে ধর্মযুদ্ধে লিপ্ত এমন কথা বলে ক্ষমতা গ্রহণের কিছুদিনের মধ্যেই পশ্চিমাদের খেপিয়ে তোলেন তিনি। গাদ্দাফির নেতৃত্বে লিবিয়া আন্তর্জাতিকভাবে প্রথম একঘরে হয় ১৯৮৮ সালে স্কটল্যান্ডের লকারবির আকাশে আমেরিকার বিমানে হামলার পর। দীর্ঘদিন পশ্চিমা অবরোধে থাকার পর ওই হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হওয়ায় অবশেষে ২০০৩ সালে পশ্চিমাদের সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো হয়। এরপর থেকে নতুনভাবে শুরু করেন রাজনৈতিক মিশন। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে গাদ্দাফি আফ্রিকান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এ সময় আরবের মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলার সাধনায় লিপ্ত হন তিনি। যে ইসলামকে ভিত্তি করে তিনি তার মসনদ ধরে রেখেছিলেন সেই ইসলামেরই ধ্বজাধারী আরেক গোষ্ঠী তালেবানকে তিনি বিক্ষোভের মদদদানের অভিযোগ তোলেন। সামনা-সামনি তাকে দেখলে যে কেউ চমকে উঠত। প্রায়ই রংচঙে ঢিলেঢালা পোশাক পরতেন তিনি। আমাজনিয়ান স্টাইলে সজ্জিত উচ্চপর্যায়ের দেহরক্ষী পরিবেষ্টিত থাকতেন। যখন উর্দি পড়তেন তখন তার জামা, কাঁধ ও টুপি থাকত সোনালি সুতায় কাজ করা এবং মেডেলে সজ্জিত। সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন ব্রিটেন থেকে। লিখেছিলেন 'গ্রিন বুক' নামের একটি বই। তবে গাদ্দাফি সবসময় ভালোবাসতেন নারীসঙ্গ। তার পাগলামির আরেক নিদর্শন ছিল ঐতিহ্যবাহী বেদুইন তাঁবু। রাষ্ট্রীয় অতিথিদের তাঁবুর নিচেই আপ্যায়িত করতে পছন্দ করতেন তিনি। এমনকি বিদেশ সফরেও বাদ যেত না তাঁবু ও নারী। ২০০৭ সালে

প্যারিস সফরে সঙ্গে নিয়ে যান তাঁবু। সেই সঙ্গে নারী দেহরক্ষীর এক বিশাল বহর। সেখানের সরকারি অতিথি ভবনের বাগানে টানানো হয় তার ২০০ বর্গফুটের তাঁবুটি। ২০০৯ সালে ইতালি সফরে গিয়ে সৃষ্টি করেন এক বিতর্ক। তিনি বলেন, 'ইউরোপের সবার ধর্ম হওয়া উচিত ইসলাম।' ২০০৫ সালে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসসহ কয়েকজন আরব নেতা ও ফিলিস্তিনিদের তিনি 'ইডিয়ট' বলে সম্বোধন করেন। প্রয়াত সৌদি বাদশাহ ফাহাদের মুখের ওপর একবার সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়েছিলেন তিনি। গাদ্দাফি হাতে সাদা গ্লাভস পরতেন যাতে 'জনগণের রক্তরঞ্জিত কয়েকজন

আরব নেতার হাত তাকে স্পর্শ করতে না হয়।' অথচ জনগণের রক্তে নিজের হাতই রঞ্জিত করেছেন তিনি। এসব উদ্ভট তথ্য ও উপাত্তের উদ্ভাবক হিসেবে সবসময়ই ইতিহাসের পাতায় জায়গা পাবেন গাদ্দাফি।

বিশ্বের দৃষ্টি এখন বাংলাদেশের দিকে : ক্রাউলি

মার্কিন কংগ্রেসে বাংলাদেশ ককাসের কো-চেয়ার যোসেফ ক্রাউলি বলেছেন, সবার দৃষ্টিই এখন বাংলাদেশের দিকে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনসহ সারা বিশ্ব বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে ২১ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ এশিয়ানদের এক সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। খবর এনার। কংগ্রেসম্যান ক্রাউলি মনে করেন, নিজেদের উন্নয়নের স্বার্থেই দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হওয়া দরকার। পারস্পরিক সম্পর্ক সুসংহত হলে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের সুফলও দ্রুত আসবে। ক্রাউলি বলেন, 'বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে প্রধান দুই দলের সমঝোতা প্রয়োজন। গণতন্ত্রের স্বার্থে দুই পক্ষকেই নমনীয় হতে হবে।' তিনি আরও বলেন, 'জিএসপি সুবিধা যাতে অব্যাহত থাকে, সে চেষ্টা আমার রয়েছে। তবে শুল্কমুক্তভাবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক যুক্তরাষ্ট্রে আমদানির ব্যাপারে তেমন কোনো তদবির পরিলক্ষিত হচ্ছে না।'

এক বক্তৃতায় দেড় কোটি টাকা

প্রতিটি বক্তৃতার জন্য সম্মানী হিসেবে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় দেড় কোটি টাকা দেওয়া হবে হিলারি ক্লিনটনকে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে তিনি যে বেতন পেতেন তার চেয়েও বেশি পাবেন এখন। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রেখে যারা সবচেয়ে বেশি অর্থ পেয়ে থাকেন, তাদের তালিকায় নাম লেখালেন তিনি। এজেন্সি 'হ্যারি ওয়াকার' তার প্রতিনিধিত্ব করবে। এ সংগঠনটি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও হিলারির স্বামী বিল ক্লিনটনেরও প্রতিনিধিত্ব করে আসছে।

ব্রিটেনের বেশির ভাগ মানুষ গণমাধ্যমে বিশ্বাস করে না

সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে, ব্রিটেনের প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষের দেশটির সংবাদ মাধ্যমের প্রতি কোনো আস্থা নেই। সেখানকার সাধারণ মানুষ মনে করেন, সংবাদ মাধ্যমগুলো সত্য খবর প্রকাশের চেয়ে মুনাফা অর্জনকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে।আইপিএসওএস/এমওআরআই সমগ্র ব্রিটেনে এ জরিপ চালিয়েছে এবং এতে ১০১৮ জন প্রাপ্তবয়স্ক ব্রিটিশ নাগরিক অংশগ্রহণ করেছেন। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মাত্র ২১ শতাংশ বলেছেন, তারা ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম ও সাংবাদিকদের সত্যনিষ্ঠ বলে মনে করেন।

Friday, February 22, 2013

রাজধানীতে অশ্লীল ছবি ও পোস্টার

রাজধানীর গুলিস্তান শপিং কমপ্লেঙ্ থেকে বুধবার রাতে বিপুল পরিমাণ অশ্লীল ছবির রিল, পোস্টার, ফটোসেটসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। তারা হলেন সাজ্জাদ হোসেন, ইকবাল হোসেন মিলন, আবু তাহের, সুরুজ সরদার, শাজাহান ও বিশ্বনাথ সাহা। তাদের বিরুদ্ধে পল্টন মডেল থানায় মামলা হয়েছে। র্যাব-৩ এর কমান্ডার অতিরিক্ত ডিআইজি মলি্লক ফখরুল ইসলাম জানান, বুধবার রাতে গুলিস্তান শপিং কমপ্লেঙ্রে ষষ্ঠ তলায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় বিভিন্ন ছায়াছবির অশ্লীল দৃশ্য সংবলিত ২৫১ ক্যান রিল, ১০ হাজার পোস্টার, ৪০০টি ফটোসেট উদ্ধার করা হয়। ঘটনায় জড়িত অভিযোগে ওই ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ক্যাপ্টেন এনামুল হকের নেতৃত্বে র্যাবের একটি দল এ অভিযান পরিচালনা করে বলে জানান তিনি।

বইমেলায়ও জনস্রোত

একুশের চেতনায় প্রাণের বইমেলা গতকাল তার চিরাচরিত রূপ ফিরে পায়। মাতৃভাষার চেতনায় উদ্দীপ্ত হয়ে মেলায় আসেন অগণিত আবালবৃদ্ধবনিতা। রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই, আ ম রি বাংলা ভাষাসহ নানা ধরনের স্লোগানে অঙ্কিত লাল-সবুজের পোশাক আর আলপনায় গোটা মেলা প্রাঙ্গণে ছিল একুশের আবহ। এ ছাড়া যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে এবারের মেলায় একাত্তরের চেতনাও প্রতিফলিত হয়েছে। সকালে শহীদ মিনার থেকেই জনস্রোত নেমেছিল মেলা প্রাঙ্গণে। সারিবদ্ধ হয়ে মেলায় ঢুকার পাশাপাশি স্টলগুলোতে ছিল উপচে পড়া ভিড়। শহীদ মিনারের বেদিতে শহীদদের পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন শেষে অনেকেই ছুটে আসেন বইমেলায়। সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ছিল বইপ্রেমীদের উপচে পড়া ভিড়। বিক্রি বাড়ায় প্রকাশকদের মুখে ছিল হাসি। তবে বরাবরের মতো এবারও নন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদের বই বেশি বিক্রি হয়েছে। অন্যপ্রকাশের স্টলে হুমায়ূন আহমেদের 'দেয়াল' কিনতে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে।

২৩৪৭ নতুন বই : প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ২১ দিনে মেলায় ২৩৪৭টি নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে। গতবার এ সময়ে প্রকাশ হয়েছিল ২৭৯২টি। সে হিসাবে গতবারের তুলনায় এবার ৪৪৫টি বই কম প্রকাশ হয়েছে। এর আগে ২০১১ সালে ২২৭৩টি, ২০১০ সালে ২৬৩০টি, ২০০৯ সালে ২১৯৭টি, ২০০৮ সালে ১৯৫৫টি, ২০০৭ সালে ১৪৬৪টি ও ২০০৬ সালে ১৬৬০টি প্রকাশ হয়। এ বছর প্রকাশের দিক থেকে এখন পর্যন্ত এগিয়ে রয়েছে কবিতার বই (৫৭৫টি)। এ ছাড়া গল্প ৩০৮, উপন্যাস ৪২৪, প্রবন্ধ ১৫৯, গবেষণা ৩২, ছড়া ৭৩, শিশুসাহিত্য ৮২, জীবনী/ স্মৃতিচারণ ৭৩, রচনাবলি ১, ভাষা আন্দোলন/ মুক্তিযুদ্ধ ৪৭, নাটক ১৪, গণিত/ বিজ্ঞান ৪২, ভ্রমণ ৪১, ইতিহাস ৩২, রাজনীতি ১৬, চিকিৎসা/স্বাস্থ্য ২১, কম্পিউটার ২, রম্য/ ধাঁধা ৪৯, ধর্মীয় ১৭, অনুবাদ ২৭, অভিধান ১, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ও গোয়েন্দা ১৯ এবং অন্যান্য বিষরের ওপর ২৮৭টি বই।

গতকাল নজরুল মঞ্চে ১৩টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচিত হয়েছে। এর মধ্যে আবদুস সোবহান সিকদারের 'দুই পাখি এক বনে'; আবদুর রউফের 'পর্বতকন্যা' ও গীতালী হাসানের 'বিগ ফাইভ আর পাখির দেশে' অন্যতম। এদিকে ২২৫টি নতুন বই এসেছে। এর মধ্যে গল্প ৩৯, উপন্যাস ৩৬, প্রবন্ধ ১৫, কবিতা ৫২, গবেষণা ৪, ছড়া ১০, শিশুসাহিত্য ৬, জীবনী ৬, মুক্তিযুদ্ধ ২, নাটক ১, বিজ্ঞান ৩, ভ্রমণ ৪, ইতিহাস ২, রাজনীতি ১, চিকিৎসা/স্বাস্থ্য ৪, কম্পিউটার ১, রম্য/ধাঁধা ৫, ধর্মীয় ২, অনুবাদ ২, অভিধান ১ এবং অন্যান্য বিষয়ের ওপর ২৯টি। সকালে মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত স্বরচিত কবিতা পাঠের আসরে সভাপতিত্ব করেন কবি আসাদ চৌধুরী। সন্ধ্যার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সাড়া জাগানো 'কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি' কবিতার কবি মাহবুব উল আলম চৌধুরীকে নিয়ে নির্মিত তথ্যচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। পরে সংগীত পরিবেশন করেন ফকির আলমগীর, আবদুল জব্বার, তিমির নন্দী, নমিতা ঘোষ, মহাদেব ঘোষ, শ্রেয়সী রায়, বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, আবদুল হালিম খান ও দীপঙ্কর মণ্ডল

Thursday, February 21, 2013

আজ অমর একুশে

'অপমানে তুমি জ্বলে উঠেছিলে সেদিন বর্ণমালা/সেই থেকে শুরু.../সেই থেকে শুরু দিনবদলের পালা।' গীতিকবির ভাষায় জাতির দিনবদলের পালা শুরু হয়েছিল যেদিন, বাঙালির মননে অনন্য মহিমায় ভাস্বর চিরস্মরণীয় সেই দিন একুশে ফেব্রুয়ারি। ইতিহাসের পাতায় রক্ত পলাশ হয়ে ফোটা সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, সফিউর, আউয়াল, অহিউল্লাহর রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আজ। মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। সারা বিশ্বের কোটি কণ্ঠে আজ উচ্চারিত হবে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর লেখা কালজয়ী গান 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি...'। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ঢাকার রাজপথে ঘটেছিল বাঙালির ইতিহাস পাল্টে দেয়ার ঘটনা। 'বাংলা ভাষা প্রাণের ভাষা' সস্নোগানে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় অকাতরে প্রাণ বিলিয়ে দেয় বাঙালি তরুণ সমাজ। ইতিহাসবিদদের মতে, ভাষার প্রশ্নে একুশের আন্দোলন হলেও প্রকৃত প্রস্তাবে তা ছিল শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিবাদ। সেদিন আত্ম-অধিকার, সমতাভিত্তিক সমাজ আর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রবিনির্মাণের স্বপ্নে জেগে উঠেছিল পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ। একুশের আন্দোলনেই ঘটে বাঙালির আত্মবিকাশ, যার ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ। হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ছিন্ন করে এসেছে অমৃত স্বাধীনতা। একুশে তাই বাঙালিত্বের চেতনার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। একুশে শহীদদের ঠাঁই এখন প্রতিটি বাঙালির মর্মমূলে। পরম শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় উচ্চারিত হয় একেকটি নাম। মহান ভাষা শহীদদের স্মরণে সারা দেশে, অগণিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এমনকি বিদেশেও বাঙালিরা যে যেখানে রয়েছে, সেখানেই গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে পালিত হচ্ছে মহান আত্মত্যাগের এ দিনটি। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির ভাষাশহীদদের স্মরণে 'জাতীয় শহীদ দিবস' ও 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' বাংলাদেশ ও সারা বিশ্বে পালিত হবে নানা আনুষ্ঠানিকতায়। রাষ্ট্রীয় আয়োজনে একুশের অনুষ্ঠানমালার সূচনা হবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ সংলগ্ন একুশের রক্তাক্ত স্মৃতিবিজড়িত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা ও মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা একুশের প্রথম প্রহরে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন। এরপর সর্বস্তরের মানুষের জন্য খুলে দেয়া হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। একুশের প্রথম প্রহরে জেগে উঠবে দেশ-বিদেশের সব শহীদ মিনার। বীর ভাষাশহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাতে ভোরের শিশির মাড়িয়ে নগ্নপদে শহীদ মিনার অভিমুখে এগিয়ে যাবে নারী, শিশু, বৃদ্ধসমেত অগণিত মানুষ। বেদিমূল ভরে উঠবে ভালোবাসার অর্ঘ্যে। আপন সংস্কৃতির বিকাশ আর সর্বস্তরে মাতৃভাষা প্রচলনের দাবিতে সস্নোগানে সস্নোগানে মুখর হবে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ। আজ সরকারি ছুটির দিন। দিবসটি স্মরণে সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সামাজিক সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক সংগঠন বিশেষ কর্মসূচি পালন করবে। সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে এবং শোকের প্রতীক কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে। অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে শহীদ মিনার অভিমুখে প্রভাতফেরি, পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, আজিমপুরে শহীদদের কবর জিয়ারত, দোয়া মাহফিল, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। জাতীয় শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণী দিয়েছেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা। রাজধানীতে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল একুশের কর্মসূচি পালন করবে। এ ছাড়াও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন দিনটি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করার জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। আওয়ামী লীগের কর্মসূচি স্বাধীনতার শত্রু, মানবতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দ্রুত সম্পন্ন ও কার্যকর করা এবং এই অশুভ শক্তির দেশবিরোধী, জাতিদ্রোহী, নৈরাজ্যমূলক কর্মকা-ের বিরুদ্ধে জাতীয় গণজাগরণ সৃষ্টির লক্ষ্যকে সামনে রেখে শ্রদ্ধাবনতচিত্তে দিনটি স্মরণ ও পালন করবে আওয়ামী লীগ। মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আজ আলোচনা সভার আয়োজন করেছে আওয়ামী লীগ। বিকাল তিনটায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়াও রাত ১২টা ১ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবে দলটি। ভোর সাড়ে ছয়টায় সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবনসহ সংগঠনের সব শাখা কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন, সকাল সাড়ে সাতটায় কালোব্যাজ ধারণ, প্রভাতফেরি সহকারে আজিমপুর কবরস্থানে শহীদদের কবরে ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও শ্রদ্ধা নিবেদন। নিউ মার্কেটের দক্ষিণ গেট থেকে প্রভাতফেরি শুরু হবে। আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন উপলক্ষে গৃহীত কর্মসূচিসমূহ দেশবাসীর সাথে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করার জন্য দলের সকল শাখাসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনসমূহের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী, সর্বস্তরের জনগণ ও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বিএনপির কর্মসূচি মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বুধবার বিকালে ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটে (রমনা) দলের পক্ষ থেকে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ ভোর ৬টায় নয়াপল্টনের দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ এবং কালো পতাকা উত্তোলন। সেখান থেকে আজিমপুর কবরস্থানে ভাষা শহীদদের মাজার জিয়ারত শেষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার অভিমুখে যাত্রা। সারাদেশে দলের জেলা ও উপজেলা কার্যালয়ে সকাল ৬টায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন এবং ভাষা শহীদদের স্মরণে আলোচনা সভা করা হবে।

অগ্নিকাণ্ডে এসএসসি পরীক্ষার ২৫০ খাতা পুড়ে ছাই

চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে অগ্নিকাণ্ডে এসএসসি পরীক্ষার ২৫০টি খাতা পুড়ে ছাই হয়েছে। গতকাল বুধবার রাত ৯টায় জাফত নগর ইউনিয়নের বড়ুয়া পাড়ায় এই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। খবর পেয়ে হাটহাজারী ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশনের কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ করেন। জাফতনগর ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল হালিম জানান, জাহানপুর বড়ুয়া পাড়ার প্রকৌশলী মিনাল কান্তি বড়ুয়ার বাড়িতে নানুপুর আবু সোবহান উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক শান্তি বড়ুয়া ভাড়া থাকেন। তাদের বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে সৃষ্ট আগুনে এসএসসি পরীক্ষার ২৫০টি খাতা, একটি মোটরসাইকেল, একটি সাইকেল, নগদ ৪৫ হাজার টাকা, টিভি, ফ্রিজ, ব্যাংকের চেক বইসহ বিভিন্ন মুল্যবান জিনিস পত্র পুড়ে ছাই হয়েছে। এতে প্রায় ২০ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে স্থানীয় লোকজন ও হাটহাজারী ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশনের কর্মকর্তারা দ্রুত এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।  নানুপুর আবু সোবহান উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক শান্তি বড়ুয়া বলেন, চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের এসএসসি পরীক্ষার বাংলা দ্বিতীয় পত্রের ২৫০টি খাতার অধিকাংশ খাতা মুল্যায়ন করা হয়েছিল। বাকিগুলো অগ্নিকাণ্ডে নষ্ট হয়েছে। ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অঞ্জনা মজলিশ বলেন, অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়েছি। পরীক্ষার খাতার মুল্যায়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষককে এ ব্যাপারে থানায় জিডি করতে বলা হয়েছে এবং শিক্ষা বোর্ডকে অবহিত করতে বলা হয়েছে। বোর্ড এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। 

ঢাকায় আর্টিকুলেটেড বাস চলাচল শুরু

দেশে প্রথমবারের মতো যাত্রী পরিবহনকারী বিশেষ ধরনের আর্টিকুলেটেড বাস চলাচল শুরু হয়েছে। গতকাল বুধবার সকালে রাজধানীর ফার্মগেটে নতুন ধরনের এই বাস চলাচলের উদ্বোধন করেন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আপাতত ঢাকায় এ রকম ১০টি বাস চলবে বলে জানা গেছে। গতকাল উদ্বোধনের পর যোগাযোগমন্ত্রী টিকিট কেটে আর্টিকুলেটেড বাসে চড়ে ফার্মগেট থেকে বনানী সেতু ভবন পর্যন্ত যান। উদ্বোধনকালে মন্ত্রী বলেন, ঢাকা মহানগরীতে যাত্রীসাধারণের পরিবহন সংকট নিরসনে এ বাস ভূমিকা রাখবে। পরে তা চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল ও রংপুরে চালু করা হবে। অনুষ্ঠানে বিআরটিসি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ হেল করিম, সড়ক বিভাগের যুগ্ম সচিব মঈনউদ্দিনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বিআরটিসি সূত্রে জানা গেছে, এপ্রিলের মধ্যে আরো ৪০টি বাস দেশে পৌঁছানোর কথা। এগুলো পর্যায়ক্রমে সব বিভাগীয় শহরে চালু করা হবে। প্রতিটি আর্টিকুলেটেড বাসে আসনসংখ্যা ১৩০। রাজধানীতে আর্টিকুলেটেড বাস সার্ভিস জয়দেবপুর চৌরাস্তা-ঢাকা বাইপাস-জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়-টঙ্গী-আবদুল্লাহপুর-উত্তরা-হাজিক্যাম্প-আর্মি স্টেডিয়াম-কাকলী-বিজয় সরণি-ফার্মগেট-শাহবাগ-মৎস্য ভবন- প্রেসক্লাব-জিরো পয়েন্ট রুটে চলাচল করবে।

কফির ভুসিতে চলে গাড়ি

অকেজো মনে করে যেসব জিনিস আমরা ফেলে দিই, সেসব জিনিসকে কাজে লাগানোর চেষ্টা এখন বিশ্বজুড়ে বেশ জনপ্রিয়। তেমনই একটি বাতিল জিনিসকে গাড়ির জ্বালানি হিসেবে অনায়াসে কাজে লাগানো হচ্ছে। সেই গাড়ির গতিও কম নয়। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬৫ মাইল। গাড়িটির জ্বালানি হিসেবে কাজে লাগানো সেই জিনিসটি আসলে কফি বীজের ভুসি। কফির ভুসিচালিত এই গাড়িটির মালিক উত্তর-পূর্ব ইংল্যান্ডের অধিবাসী মার্টিন বেকন। এ ধরনের গাড়ি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬৫ মাইল গতিতে চলার ঘটনাও এটাই প্রথম। ফলে গাড়িটি ইতিমধ্যেই গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষের নজরে পড়েছে। মূলত, কফি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা থেকে উৎপাদিত ভুসির গুটিগুলো এ ধরনের গাড়ির জ্বালানি হিসেবে কাজ করা হয়। গাড়ির পেছনের একটি অংশে চারকোলের আগুন দিয়ে ভুসিতে তাপ দেওয়া হয়। এর ফলে কার্বন মনোঙ্াইড এবং হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন হয়। এ গ্যাস ঠাণ্ডা করে গাড়ির জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়।