Tuesday, May 3, 2011

হোয়াইট হাউসের সামনে আনন্দ উল্লাস

বিজয়ের ধ্বনিতে ফেটে পড়েছে হাজার হাজার মার্কিনি। হোয়াইট হাউসের সামনে গভীর রাতে সমবেত হাজার হাজার মানুষ 'ইউএসএ' 'ইউএসএ' বলে উল্লাস করছে। আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যুর খবর প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে হর্ষধ্বনিতে ফেটে পড়ে সবাই। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এই ঘোষণা দেন। এ সময় অনেককে মার্কিন পতাকা বহন করতে দেখা যায়। তারা আকাশের দিকে পতাকা মেলে ধরছে। খবর বিবিসি, সিএনএন ও আল-জাজিরার।
লাদেনের মৃত্যুর খবর টেলিভিশনে প্রচারের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট আকস্মিকভাবে তার ভাষণের ঘোষণাটি আসে। এরপর দু-একজন করে একে একে হাজার হাজর মানুষ হোয়াইট হাউসের সামনে জড়ো হতে থাকে। হোয়াইট হাউসের সামনে উপস্থিত নিউইয়র্কের দমকল বাহিনীর কর্মী কেনেথইস্পথ জানান, 'আজ রাতে আমি আমেরিকান বলে গর্ববোধ করছি।'
লাদেনের মৃত্যুর খবর জানেন কিনা প্রশ্ন করা হলে হোটেলের ক্লার্ক বেকি গ্রেন্ট বলেন, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর এমন খবর পেলাম।
পাকিস্তানে মার্কিন বাহিনীর হাতে নিহত হওয়ার পর ইন্টারনেট ও মার্কিনিদের উল্লাসের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। টুইটার এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন মন্তব্যে আনন্দের প্রকাশ ঘটেছে।
ইয়াহু মেসেজে একজন লিখেছেন, 'অবশেষে আজ রাতে আমি ঘুমাতে যাচ্ছি। লাদেন দীর্ঘদিন লুকিয়ে ছিল। অবশেষে সে ধরা পড়েছে এবং মারা পড়েছে। আমি এ মুহূর্তে খুবই খুশি।'

ন্যাটো হামলায় গাদ্দাফির ছেলেসহ তিন নাতি নিহত

ন্যাটো বিমান বাহিনীর হামলায় লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলিতে মুয়াম্মার গাদ্দাফির ছোট ছেলে সাইফ আল-আরব (২৯) এবং তিন নাতি নিহত হয়েছেন। সরকারি মুখপাত্র মুসা ইব্রাহিম রবিবার এ তথ্য জানিয়েছেন। খবর এএফপির।
লিবিয়া সংকট সমাধানে গাদ্দাফির দেওয়া আলোচনার প্রস্তাব ন্যাটো ও বিদ্রোহী বাহিনী নাকচ করে দেওয়ার পরপরই এ হামলার ঘটনা ঘটল। এক সংবাদ সম্মেলনে মুসা ইব্রাহিম সাইফের নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, শনিবার বিকালে ন্যাটো বাহিনীর এক হামলায় আল-আরব নিহত হন। সাইফ জার্মানিতে পড়াশোনা করতেন। তিনি আরও জানান, হামলার সময় গাদ্দাফি ও তার স্ত্রী বাসভবনে ছিলেন। তবে তারা অক্ষত আছেন। মুখপাত্র আরও জানান, গাদ্দাফি কোথায় আছেন গোয়েন্দারা এই তথ্য ফাঁস করে দিয়েছেন। ন্যাটো বিমান হামলা চালানোর কথা নিশ্চিত করলেও সাইফ আল-আরবের নিহত হওয়ার ব্যাপারে কিছু জানায়নি। এর আগে রাজধানী ত্রিপোলিতে কমপক্ষে তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
ন্যাটোর এক বিবৃতিতে জানানো হয়, তারা গাদ্দাফির বাসভবন বাব-আল-আজিজিয়ার আশপাশের এলাকায় শনিবার বিকালে হামলা চালিয়েছে। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে গাদ্দাফির ছেলের মৃত্যুর খবর প্রচারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্রোহীরা আধ ঘণ্টাব্যাপী তাদের নিয়ন্ত্রিত পূর্বাঞ্চলীয় শহর বেনগাজিতে গুলি ছোড়ে, রকেট নিক্ষেপ করে উল্লাস করে।
লিবিয়ায় বিদ্রোহীদের সেনা মুখপাত্র কর্নেল আহমেদ ওমর বাণী জানান, আমরা খুবই খুশি যে বিমান হামলায় গাদ্দাফির ছেলে নিহত হয়েছেন। এ জন্য আমরা গুলি ছুড়ে এটা উদযাপন করছি। এর আগে মুসা সাংবাদিকদের গাদ্দাফির বিধ্বস্ত বাসভবনে নিয়ে যান। তবে এ ঘটনায়ই যে গাদ্দাফির ছেলে নিহত হয়েছেন তার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
এর আগে শনিবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে গাদ্দাফি ন্যাটো বাহিনীর উদ্দেশে বলেন, তিনি পদত্যাগ করছেন এ রকমটি আশা করা ভুল। তিনি বলেন, 'আমার পদত্যাগের কোনো ইচ্ছা নেই। আমি লিবিয়াতেই থাকব। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লড়ে যেতে চাই।'
জাতিসংঘ কর্মী প্রত্যাহার : লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলিতে কর্মরত আন্তর্জাতিক সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতিসংঘ।
ন্যাটো বিমান হামলায় গাদ্দাফির ছেলে নিহত হওয়ার পর উত্তেজিত জনতা বিদেশি দূতাবাসসহ জাতিসংঘ অফিসে হামলা চালালে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। খবর বিবিসির।
এদিকে লিবিয়ায় মিশন তছনছ করার পর ব্রিটেন সরকার সে দেশে নিয়োজিত লিবিয়ান রাষ্ট্রদূতকে সে দেশ ছেড়ে যেতে বলেছে।

সাগরে ফেলে দেওয়া হলো লাশ

আল কায়দার প্রতিষ্ঠাতা ও জঙ্গি নেতা ওসামা বিন লাদেনের মৃতদেহ সাগরে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তান থেকে তার মরদেহ আফগানিস্তানে নিয়ে যাওয়ার পর তা সাগরে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। মার্কিন পদস্থ কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে গতকাল এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি। তবে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করে বলেছেন, সাগরে ভাসিয়ে দেওয়া লাশটিই কি ওসামা বিন লাদেনের নাকি অন্য কারো?

যেভাবে আল-কায়েদার শীর্ষ নেতা

পরিবারের বাইরে গিয়েই জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার শীর্ষ নেতায় পরিণত হন ওসামা বিন লাদেন। সৌদি আরবে ১৯৫৭ সালে তার জন্ম। ধনকুবের মুহাম্মদ বিন লাদেনের ৫০ সন্তানের একজন তিনি। ১৭ বছর বয়সে ওসামা প্রথমবারের মতো দূরসম্পর্কের এক সিরীয় বোনকে বিয়ে করেন। এরপর তিনি আরও চারটি বিয়ে করেন। তার কমপক্ষে ২৩ জন সন্তানের কথা জানা যায়। খবর রয়টার্স, বিবিসি ও আল-জাজিরা। মুসলমানরা যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে সন্ত্রাসবাদের শিকার হচ্ছে বলে বিশ্বাস করতেন ওসামা। যদিও এর আগে তিনি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম সহযোগী। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে ১৯৮০ এর দশকে আফগানিস্তানে সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে জঙ্গি তৎপরতায় অংশ নেন ওসামা।
১৯৯০ এর দশকে আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে বিভিন্ন মার্কিন স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনাকারী হিসেবে অভিযুক্ত ছিলেন তিনি। এরপর তাকে পরিবার থেকে ত্যাজ্য করা হয়, বাতিল হয় সৌদি আরবের নাগরিকত্বও। ওই সময়ই আল-কায়েদা গঠন করেন তিনি। নব্বইয়ের দশকে তিনি আবার আফগানিস্তানে ফিরে আসেন। এখানে তালেবান শাসনের ছত্রছায়ায় বিভিন্ন ক্যাম্পে সারা বিশ্ব থেকে আসা ইসলামী জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ চালিয়ে যান তিনি। ১৯৯৮ সালে পূর্ব আফ্রিকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে বোমা হামলার পর আফগানিস্তানের ক্যাম্পে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অক্ষত ছিলেন ওসামা। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্র ও পেন্টাগনে হামলায় প্রায় তিন হাজার মানুষ নিহত হন। লাদেন এ হামলার দায় স্বীকার করেন। তিনি গোপন স্থান থেকে এক বক্তব্যে বলেন, এ হামলা তার প্রত্যাশা ছাড়িয়ে গেছে। এরপর গত এক দশক ধরে লাদেনকে ধরতে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অভিযান চলেছে। ধরিয়ে দিলে আড়াই কোটি ডলার পুরস্কারের খাঁড়া মাথায় নিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর চোখে ধুলো দিয়ে ছিলেন ওসামা।
২০০৯ সালের ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জানান, লাদেনের অবস্থান ও কার্যক্রম সম্পর্কেও তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনার পরে বিন লাদেন ও আল-কায়েদার দ্বিতীয় প্রধান আইমান আল-জাওয়াহিরির বক্তব্যসহ ৬০টির বেশি ভিডিও প্রকাশিত হয়, যাতে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে আরও ভয়াবহ হামলার হুমকি দেওয়া হয়।

ওসামা বিন লাদেন নিহত

পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে মাত্র ৬২ কিলোমিটার উত্তরের আবোত্তাবাদ। রবিবার। স্থানীয় সময় রাত ১০টা ৩০ মিনিট। নিশ্চিত খবরের ভিত্তিতে আফগানিস্তান থেকে সামরিক হেলিকপ্টারে উড়ে এলেন মার্কিন মেরিন বাহিনীর চৌকস একদল কমান্ডো। লক্ষ্য 'যুক্তরাষ্ট্রের এক নম্বর শত্রু' আল-কায়েদার শীর্ষ নেতা ওসামা বিন লাদেন। মুহূর্তেই সুরক্ষিত একটি ভবনের চারপাশে অবস্থান নেন তারা। এ ভবনেই পলাতক জীবন যাপন করছেন আল-কায়েদার শীর্ষ নেতা ওসামা বিন লাদেন। ততক্ষণে বিষয়টি টের পেয়ে গেছেন বিন লাদেনের অনুগত যোদ্ধারা। কিন্তু হলে কী হবে, শেষরক্ষা হয়নি। ৪০ মিনিটের ওই রুদ্ধশ্বাস অভিযানে আপ্রাণ চেষ্টা করেও বিন লাদেনকে বাঁচাতে পারেননি তারা। মার্কিন এ অভিযানে লাদেন ছাড়াও নিহত হয়েছেন তার এক ছেলেসহ তিনজন। ওয়াশিংটন বিন লাদেনের নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, লাদেনকে হত্যার মাধ্যমে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে যুক্তরাষ্ট্র বড় বিজয় অর্জন করল। বেশ কয়েক বছর ধরেই এমন খবর বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছিল যে আল-কায়েদা শীর্ষ নেতা বিন লাদেন পাকিস্তানের দূরবর্তী উপজাতি-অধ্যুষিত এলাকায় লুকিয়ে আছেন। আবার কখনো এমনও খবর বেরিয়েছে, আল-কায়েদার শীর্ষ এই নেতা লুকিয়ে আছেন আফগানিস্তানেরই কোনো সীমান্ত এলাকায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে সে স্থানে পাওয়া গেল, যেখান থেকে পকিস্তানের রাজধানী খুব বেশি দূরে নয়। শুধু তা-ই নয়, যে ভবনে অভিযান চালানো হয়েছে, সেটি পাকিস্তানের অন্যতম একটি সেনানিবাসের অত্যন্ত নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় আবৃত এলাকায় অবস্থিত।
আবোত্তাবাদ এলাকায় প্রায় নয় হাজার বর্গফুট জমির ওপর তিনতলা ভবন। চারদিক ১৪ ফুট উঁচু দেয়ালে ঘেরা। দেয়ালের ওপর কাঁটাতারের বেড়া। ইন্টারনেট বা টেলিফোন সংযোগ নেই। ওই ভবনে স্ত্রী-পরিজনসহ অবস্থান করছিলেন মার্কিন মোস্ট ওয়ান্টেড ওসামা বিন লাদেন। হঠাৎই এমন খবর চলে আসে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। এমন খবরের ভিত্তিতে অভিযানের জন্য দ্রুত প্রস্তুত হয় আফগানিস্তানে থাকা মার্কিন বাহিনী। কিন্তু খবরটি আসলে কতটুকু নিশ্চিত সে বিষয়ে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত ছিল তারা। কারণ এর আগেও বহুবার এ ধরনের খবরের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করেছে তারা। নিষ্ফল হয়েছে সেসব অভিযান। বিষয়টি তারা পরিষ্কার হয় পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইর সহযোগিতায়। এরপর আর দেরি নয়। আফগানিস্তান থেকে উড়ে আসে বেশ কয়েকটি সামরিক হেলিকপ্টার। শুরু হয় রুদ্ধশ্বাস এক অভিযান। সঙ্গে ছিলেন আইএসআইয়ের কর্মকর্তারাও।
ভবনটির ওপর দিয়ে প্রথমে সামরিক হেলিকপ্টারগুলো বেশ কয়েকবার চক্কর দেয়। এর পরই সেগুলো নেমে আসে মাটিতে। অবস্থান নেয় ভবনের আশপাশে। হেলিকপ্টারগুলো থেকে বের হয়ে আসেন ১৫ থেকে ২০ জন মার্কিন সেনা। তারা ছিলেন বিভিন্ন অস্ত্রে সজ্জিত। হেলিকপ্টার থেকে প্রথম তারা কথা বলেন আশপাশে বসবাসকারী কয়েকটি বাড়ির বাসিন্দাদের সঙ্গে। সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে তাদের লক্ষ্যবস্তু ওই ভবন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়। জবাবে তারা জানান, বাড়িটি ১৪-১৫ বছর আগে এক পশতুন নির্মাণ করেন। এখন এটি ভুতুড়ে বাড়ি বলেই তাদের কাছে পরিচিত। এখানে যারা বসবাস করেন, তারা খুব একটা বাইরে বের হন না। যা-ও দু-একজন বের হন, তারা সাধারণ মানুষের সঙ্গে মেশেন না। জানাশোনার পর্ব শেষে মার্কিন সেনারা আশপাশের বাসিন্দাদের দরজা-জানালা বন্ধ করে ঘরের ভেতর অবস্থান করার অনুরোধ জানান। এ সময় বন্ধ করে দেওয়া হয় ওই এলাকার বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। অন্ধকারে ডুবে যায় পুরো এলাকা। শুরু হয় মূল অভিযান।
যে বাড়িতে বিন লাদেন অবস্থান করছিলেন, এতে প্রবেশের ফটক ছিল দুটি। চারদিক থেকে ভবনটি ঘেরাও করে ফেলা হয়। অবস্থান নেওয়া হয় দুই ফটকে, যাতে কোনোভাবেই পালিয়ে যেতে না পারেন আল-কায়েদা নেতা। শুরু হয় প্রচণ্ড গোলাগুলি। প্রতিরোধে সর্বাত্মক চেষ্টা চালান ভবনে অবস্থান করা তার অনুগতরা। কিন্তু প্রশিক্ষিত আর অস্ত্রসজ্জিত মার্কিন বাহিনীর সামনে বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারেননি তারা। সর্বশেষ চেষ্টা নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে নেতাকে বাঁচিয়ে রাখা। সে ভাবনা থেকেই, মার্কিন সেনারা যখন খুব কাছাকাছি, লড়াই করার রসদ যখন ফুরিয়ে গেছে, ঠিক তখন, বিন লাদেনকে মাঝখানে রেখে চারদিকে মানব-বর্ম রচনা করেন অনুগতরা। মানব-বর্মে অংশ নেন একজন নারীও। মার্কিন সেনারা গুলি ছুড়তে থাকে মানব-বর্ম লক্ষ্য করে। ঝাঁজরা হয়ে যায় মানব-বর্ম। লুটিয়ে পড়তে থাকেন অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা একে একে। নিহত হন বিন লাদেনের এক ছেলে, একান্ত অনুগত ও সবচেয়ে বিশ্বস্ত এক বার্তাবাহক। নিহত হন মানব-বর্মে অংশ নেওয়া ওই নারীও। তবে তিনি বিন লাদেনের চতুর্থ স্ত্রী কি না, এ নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
রুদ্ধশ্বাস মার্কিন এ অভিযানের শেষ সময়টা পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন বিন লাদেন। ওই সময় তাকে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়। কিন্তু নিজ সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন আল-কায়েদা নেতা। জানিয়ে দেন, 'ইসলামের শত্রু' যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আত্মসমর্পণ নয়। বীর কখনো আত্মসমর্পণ করে না। মৃত্যু হলে হোক। এর পরই অত্যাধুনিক অস্ত্র তাক করে বেশ কয়েকটি গুলি করা হয় বিন লাদেনের মাথায়। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন 'যুক্তরাষ্ট্রের এক নম্বর শত্রু'। শেষ হয় বিন লাদেন উপাখ্যানের।
লাদেনের নিহত হওয়ার পর বিষয়টি হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়। নিহত ব্যক্তি বিন লাদেন কি না, এ জন্য করা হয় ডিএনএ পরীক্ষা।
এদিকে মার্কিন অভিযানে বিন লাদেন নিহত হয়েছেন বলে যে দাবি করেছে ওয়াশিংটন, এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি আল-কায়েদা। তাদের পক্ষ থেকে বিষয়টি স্বীকারও করা হয়নি। তবে লাদেনকে হত্যার পর তার অনুগতরা যে কোনো ধরনের ক্ষতি করতে পারে আশঙ্কায় মার্কিন নাগরিকদের চলাফেরার ওপর সতর্কতা জারি করেছে ওয়াশিংটন। সূত্র : রয়টার্স, বিবিসি ও দ্য গার্ডিয়ান।

Monday, May 2, 2011

ধারাবাহিক নির্মাণে

নির্মাতা পরিচয়ে অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফার আত্মপ্রকাশ হয়েছে আগেই। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি একক নাটক নির্মাণ করেছেন তিনি। এবার একটি ধারাবাহিক নাটক নির্মাণ করতে যাচ্ছেন এই অভিনেত্রী। 'কোমল বিবির অতিথিশালা ও কানা সিরাজ উদ দৌলা' নামের নাটকটি রচনা করেছেন বদরুল আনাম সৌদ ও হাসান শাহরিয়ার।
নাটকটিতে সুবর্ণা মুস্তাফার সঙ্গে যৌথ পরিচালক হিসেবে থাকবেন বদরুল আনাম সৌদ। এরই মধ্যে নাটকটির বেশ কিছু পর্বের শুটিং শেষ হয়েছে। নাটকটি শিগগিরই এটিএন বাংলায় প্রচারিত হওয়ার কথা রয়েছে।

আরেকটি স্টুডিও থিয়েটার

১ মে ঢাকায় আরেকটি স্টুডিও থিয়েটার চালু হচ্ছে। গতি থিয়েটার ঢাকার মোহাম্মদপুরে নিজস্ব মহড়াকক্ষকে স্টুডিও থিয়েটারে রূপ দিচ্ছে। নিজস্ব লাইট, সাউন্ড, পর্দা আর দর্শক আসনের ব্যবস্থা থাকবে এই স্টুডিওতে। গতির কর্মীরা তাঁদের সৃজনশীলতা দিয়ে মহড়াকক্ষের স্বল্প পরিসরের গভীরতা কিভাবে বাড়ানো যায়, এ সম্পর্কে নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। মে দিবস থেকে গতির স্টুডিও থিয়েটারের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে। এদিন সন্ধ্যায় বিশ্বের সব শ্রমজীবী মানুষের প্রতি সম্মান জানিয়ে গতি থিয়েটার মঞ্চায়ন করবে আশিক সুমনের নাট্যরূপ আর মণি পাহাড়ির নির্দেশনায় নাটক 'রুটি'। এতে অভিনয় করছেন তাহসিন রহমান ও আশিক সুমন। অন্যান্য মঞ্চে নাটক মঞ্চায়নের পাশাপাশি প্রতি শুক্রবার গতির বিভিন্ন প্রযোজনার প্রদর্শনী হবে এই স্টুডিও থিয়েটারে_এমনটি আশা করছেন গতির সব কর্মী।

চলচ্চিত্র নির্মাণ ও অভিনয় কর্মশালা

টেলিভিশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ট্র্যাব) আয়োজনে ১৫ থেকে ২০ মে সপ্তাহব্যাপী চলচ্চিত্র নির্মাণ ও অভিনয় কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে। এফডিসির জহির রায়হান প্রজেকশন হলে ওই কর্মশালায় চলচ্চিত্র নির্মাণ (চিত্রনাট্য রচনা, পরিচালনা, সম্পাদনা, চিত্রগ্রহণ) ও অভিনয়ে তাত্তি্বক ও ব্যবহারিক বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা দেওয়া হবে। পাশাপাশি এফডিসির শুটিং, ডাবিং, এডিটিং ফ্লোর, কালার ল্যাবসহ বিভিন্ন অংশে চলচ্চিত্র নির্মাণপ্রক্রিয়া সরেজমিনে পরিদর্শনের ব্যবস্থা থাকবে। কর্মশালায় প্রশিক্ষণ দেবেন চাষী নজরুল ইসলাম, কাজী হায়াৎ, মতিন রহমান, আবদুল লতিফ বাচ্চু, এস এম মহসিন, অনুপম হায়াৎ প্রমুখ।

স্বপ্নমাখা চোখে

অঙ্কিতা শোর ক্যামেরার সামনেই কাটাতে চান পুরো জীবন। মিস ইন্ডিয়া খেতাব জেতা এই ভারতীয় সুন্দরী আপাতত মডেলিং নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও ভবিষ্যতে থিতু হতে চান বড় পর্দায়। মডেল নন, হতে চান অভিনেত্রী। বললেন, 'অভিনয় আমার প্রথম ভালোবাসা। মিস ইন্ডিয়া খেতাব জেতার আগে থেকেই আমি অভিনেত্রী হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এখন সেই চেষ্টাকে সাফল্যে পরিণত করাটা একটু সহজ বলেই ভাবছি।'
ভাবনার কি আর শেষ আছে! সাবেক মিস ইন্ডিয়া প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার দোর্দণ্ড প্রতাপ দেখে মনে মনে সাহস পাচ্ছেন অঙ্কিতা। স্বপ্ন বুনে চলেছেন দিনরাত। কেবল বড় পর্দায় কাদের সঙ্গে অভিনয় করার ইচ্ছা? 'বলিউডের সব নামি তারকার সঙ্গে কাজ করতে চাই। শাহরুখ ও আমিরের সঙ্গে তো অবশ্যই। কারণ এ দুজনই আমার খুব প্রিয় অভিনেতা। আমির সাহসী অভিনেতা, চরিত্র নিয়ে নিরীক্ষা করতে ভালোবাসেন। শাহরুখ সবার চেয়ে আলাদা।' শাহরুখের সঙ্গে সম্প্রতি একটি বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করেছেন অঙ্কিতা। আংশিক পূরণ হয়েছে বৈকি!

'অগ্নিপথে' অগ্নিকাণ্ড

এবার হৃতি্বক একা নন, দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন প্রিয়াঙ্কাও। 'অগ্নিপথ'-এর সেটে সত্যি সত্যি আগুন লেগে গেল। কারো কিছু হয়নি। তবে ছবির নায়ক হৃতি্বক রোশন ও প্রিয়াঙ্কা চোপড়াকে একটু ধকল পোহাতে হয়েছে। শুটিং চলছিল একটি পূজার দৃশ্যের। হাতে বিরাট এক থালায় কয়েকটি জ্বলন্ত দিয়া নিয়ে শুটিং করছিলেন হৃতি্বক, কিভাবে যেন কাত হয়ে পড়ল একটা দিয়া। গরম তেল ছিটকে পড়ল হৃতি্বকের হাতে। যন্ত্রণায় তিনি কাতরে ওঠার আগ পর্যন্ত অবশ্য কেউ বুঝতে পারেননি ঘটনা। খুব বেশি ক্ষতি হয়নি, একটু জ্বালাপোড়া আছে। একই দৃশ্যের শুটিংয়ে সেই দিয়া থেকেই আগুন লাফিয়ে উঠল প্রিয়াঙ্কার লেহেঙ্গায়। তিনি অবশ্য সঙ্গে সঙ্গেই দৌড় শুরু করেছিলেন বলে রক্ষা। সবাই ছুটে এসে আগুন নিভিয়ে ফেলেন। প্রিয়াঙ্কারও ক্ষতি হয়নি, তবে লেহেঙ্গাটা পাল্টাতে হয়েছে। আপাতত শুটিং বন্ধ রাখা হয়েছে। হৃতি্বকের হাতের ব্যথা সারলেই আবার শুরু হবে কাজ। নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় এই ছবির রিমেকে কাজ করতে গিয়ে কয়েক দিন আগে আরো একবার আহত হয়েছিলেন হৃতি্বক। শুটিংসেটে অভিনেতার আহত হওয়া নাকি ছবির জন্য সুফল বয়ে আনে_বলিউডের বহুল প্রচলিত কুসংস্কারের এটি একটি। হৃতি্বকের প্রথমবার আহত হওয়া নিয়ে ছবিটির প্রযোজক করন জোহর বেশ উৎফুল্ল ছিলেন। এবার তো তাহলে করনের খুশিতে রীতিমতো আট নয়, ষোলোখানা হয়ে যাওয়ার কথা!