Tuesday, August 24, 2010
ফ্যাশন আইকন সোনম
ফ্যাশন ছবিতে সুপার মডেল চরিত্রে অভিনয় করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছিলেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া ও কঙ্গনা রনৌত। দুজনের কাছেই প্রশ্ন ছোড়া হয়, আপনাদের দৃষ্টিতে এ সময়ের ফ্যাশন আইকন কে? অভিন্ন উত্তর বের হয় দুজনের মুখ থেকেই—‘সোনম কাপুর! আর কে?’ টালিগঞ্জের এক নম্বর নায়িকা কোয়েল মল্লিকেরও একই পছন্দ। সমালোচকদের দৃষ্টিতে, অভিনয়জীবনের প্রথম দুটি ছবিতে ‘ঘোড়ার ডিম’ নম্বর পেয়েছিলেন সোনম। অর্থাৎ সঞ্জয় লীলা বানসালি এবং রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহরার মতো পরিচালকের ছবিতে অভিনয় করার পরও সাওয়ারিয়া, দিল্লি সিক্স বক্স অফিসে ধরাশায়ী হয়েছিল। তার পরও সোনমকে নিয়ে কেন টানাহেঁচড়া? কেন তাঁকেই বলা হচ্ছে ‘ফ্যাশন আইকন’? তবে কি বাবা অনিল কাপুরের জোরেই এই সম্মানপ্রাপ্তি? সন্দেহের আশঙ্কা উড়িয়ে দিলেন পরিচালক সঞ্জয় লীলা, ‘সোনম যখন ব্ল্যাক-এর সহকারী পরিচালক হওয়ার দায়িত্ব নেয়, খেয়াল করতাম প্রতিদিন সে সুন্দর করে চুল আঁচড়ে, ডিজাইনারদের পোশাক, জুতো পরে সেটে হাজির হতো। একদিন বাধ্য হয়েই ওকে বলেছিলাম, আমার সহকারী হওয়ার জন্য তোমাকে এত ফ্যাশন-সচেতন না হলেও চলবে। তখনই বুঝতে পেরেছিলাম, সোনমের রুচিবোধই একদিন ওকে ফ্যাশন আইকনে পরিণত করবে।’
২০০৭—০৯ তিন বছরে সোনমের দুটি ছবি মুক্তি পেয়েছে, দুটিই ডাহা ফ্লপ। তবে ২০১০-এ এসে আগের সব কলঙ্কের কালিমা ধুয়েমুছে ফেলেছেন সোনম। পরপর দুটি ছবি আই হেইট লাভ স্টোরিজ এবং আয়শা সোনমকে ‘টপ ব্র্যাকেট’-এ নিয়ে গেছে। প্রথমটি করণ জোহর প্রোডাকশনের এবং শেষেরটি বাবা অনিল কাপুর প্রোডাকশনের নারীকেন্দ্রিক ছবি। জেন অস্টিনের ইমা অবলম্বনে আয়শা ছবির সাফল্য-ব্যর্থতা সবকিছুই নির্ভর করছিল সোনমের ওপর। হতাশ করেননি কাপুর-কন্যা। মুক্তির আগেই আয়শা মূলধন উঠিয়ে এনেছিল। মুক্তির পর যতটুকু প্রাপ্তি, পুরোটাই লাভের খাতায়। কারিনা কাপুর (কুরবান), প্রিয়াঙ্কা চোপড়ারাও (পেয়ার ইম্পসিবল, হোয়াটস ইওর রাশি) নারীকেন্দ্রিক ছবিগুলো টেনে নিয়ে যেতে পারেননি। সোনম পেরেছেন। এ কারণেই হয়তো প্রযোজকদের লম্বা লাইন পড়ে গিয়েছে সোনমের বাড়ির দরজায়। অবশ্য সবার সঙ্গে বাবা অনিল কাপুরকেই সাক্ষাৎ করতে হচ্ছে। সদ্য তারকাখ্যাতি পাওয়া মেয়ে নিউজিল্যান্ডে আই হেইট লাভ স্টোরিজ-এর শুটিং করে ছুটেছেন এডিনবার্গে, টানা দুই মাস শহীদ কাপুরের সঙ্গে পঙ্কজ কাপুরের মৌসম-এর শুটিং সেরেছেন। সেখান থেকে ফিরে আরও দুই মাসের জন্য টরন্টোতে ছুটেছেন, অক্ষয় কুমারের সঙ্গে আনিস বাজমির থ্যাংক ইউ ছবির বাকি কাজ শেষ করতে। এই ছবির কাজ শেষ হতে না-হতেই রোমে ছুটতে হবে, সেখানে আব্বাস মাস্তানের ইটালিয়ান জব (অভিষেক বচ্চন) ছবির ইউনিট তাঁর জন্য অপেক্ষা করবে। এমনকি বাবা অনিল কাপুরের ভাষ্যমতে, তাঁর মেয়ে ইতিমধ্যেই হলিউডের তিন-চারটি ছবির প্রস্তাব পেয়েছেন। এর মধ্যে বেন স্টিলারের থার্টি মিনিটস অর লেস ছবিতে অভিনয়ও করতে পারেন সোনম। আমির খান, ঐশ্বরিয়া রাই, হূতিক রোশন, ইমরান খানের পর সোনম খানও সম্প্রতি একটি কোমল পাণীয়র মুখপাত্র নির্বাচিত হয়েছেন। বছরব্যাপী প্রচারণার জন্য তিনি পাবেন তিন কোটি রুপি। সবই যখন সোনমের দখলে, প্রেমের আকাশেও স্বাভাবিক নিয়মে তাঁর ‘বাকবাকুম’ করার কথা। আই হেইট লাভ স্টোরিজ-এর পরিচালক পুনিত মালহোত্রার সঙ্গে ‘ইটিশ-পিটিশ’-এর কথাও শোনা যায় জোরেশোরে। কিন্তু না, সোনমের সাফ কথা, ‘এ মুহূর্তে আমি “একলা চলো নীতি” কঠোরভাবে পালন করছি। আর কোনো দিন দুর্ভাগ্যবশত “দোকলা” হয়ে গেলেও সেটা প্রকাশ করার মতো ভুল জীবনেও করব না।’
অন্তত এটা তো বলা যাবে, কেমন প্রেম, প্রেমিক পুরুষ তাঁর কাম্য? কোনো উদাহরণ? ‘উদাহরণ তো ঘরেই আছে। আমি আমার মা-বাবার মতো প্রেম করতে চাই। যে প্রেমে বিশ্বাস থাকবে, থাকবে ধৈর্য। আমার বাবা-মা যখন প্রেমে পড়েছিলেন, তখন তাঁদের বিয়ে করার মতো আর্থিক অবস্থা ছিল না। তবে, বাবা মাকে কথা দিয়েছিলেন, যত দিন নিজেকে মায়ের যোগ্য করে তুলতে না পারবেন, তত দিন অপেক্ষা করবেন। সেই অপেক্ষা ১১ বছরে গিয়ে ঠেকে। ১১ বছর প্রেম করার পর তাঁরা বিয়ে করেন। আমি এমন প্রেমই করতে চাই।’
সোনমের মতে, মা-বাবার কারণেই ‘ধৈর্য’ ব্যাপারটি তিনি রপ্ত করতে পেরেছেন। তাই তো পাঁচ বছর আগের ৯০ কিলোর সোনম নিজের চেষ্টার কারণে এখন ৫৪ কিলোতে এসে ঠেকেছেন। ১৮ বছর বয়স থেকে বাবার কাছ থেকে অর্থকড়ি কিছুই নেন না সোনম। নিজের খরচে চলেন। জীবনের কোনো কিছু নিয়েই অনুতপ্ত নন তিনি। এমনকি অভিনয় ক্যারিয়ারের প্রথম দুটি ফ্লপ নিয়েও নয়, ‘সাওয়ারিয়া, দিল্লি সিক্স-এ কাজ না করলে আমি অভিনয় শিখতাম না। আর অভিনয় না শিখলে আই হেইট লাভ স্টোরিজ, আয়শাও সফল হতো না।’ বাবা অনিল কাপুরের আশাবাদ, সোনমের এই বুদ্ধিমত্তাই তাকে অনেক দূর নিয়ে যাবে। শুধু ফ্যাশন আইকন নয়, কালজয়ী অভিনেত্রী হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করবে।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment