Thursday, October 31, 2024

বাসচাপায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নিহত, বাসে আগুন-অবরোধ

 

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কে বাসের ধাক্কায় বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী নিহত হয়েছেন। নিহত মাইশা ফৌজিয়া মিম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বাসটিতে আগুন দেন এবং মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।

খবর পেয়ে বরিশাল নগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং সেনাবাহিনীর সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যান। তাঁরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা চালান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত ৯টার দিকে মাইশা মহাসড়ক পার হওয়ার সময় কুয়াকাটা থেকে ছেড়ে আসা নারায়ণগঞ্জ ট্রাভেলস নামে একটি বাস তাঁকে চাপা দেয়। পরে আহত মাইশাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।


কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের ভোলা রোডের মোড়ে পুলিশ বক্সের সামনে বাসটি মাইশাকে ধাক্কা দেয়। বাসটি দ্রুতগতিতে বরিশালের দিকে যাচ্ছিল। বাসের ধাক্কায় মাইশা ছিটকে রাস্তার মাঝখানে পড়ে গেলে তাঁর শরীরের একাংশের ওপর দিয়ে বাসটি চলে যায়।

পরে শিক্ষার্থীরা বাসটি জব্দ করলেও চালক পালিয়ে যান। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেন। এ সময় বিচারের দাবিতে উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও এবং মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। পরে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন তাঁরা। রাত ১২টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অবরোধ চলছিল।

বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার মধ্যে বাসের চালককে গ্রেপ্তার করতে না পারলে মহাসড়ক অবরোধের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। পরিসংখ্যান বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মো. রাজীব জানান, বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে দোষীকে গ্রেপ্তার না করা হলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আরও কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবে।


বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর রাহাত হোসাইন ফয়সাল বলেন, ‘ঘটনাটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত আমরা হাসপাতালে যাই। কিন্তু হাসপাতালের নেওয়ার পরপরই মাইশাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা পুলিশকে অনুরোধ করেছি।’

বরিশাল নগর পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) আলী আশরাফ ভূঞা বলেন, ‘বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। আমাদের ফোর্স ইতিমধ্যে দোষীদের গ্রেপ্তারের জন্য কাজ করছে। দ্রুতই আমরা তাঁদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসব।’

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শুচিতা শরমিন বলেন, ‘আমরা এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তার চাই। আগামী ১২ ঘণ্টার মধ্যে দোষীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তি দিতে হবে। না হলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে কঠোর অবস্থান থেকে যা যা করা দরকার আমরা তা-ই করতে বাধ্য হব।’



‘নবীকে কটূক্তি’র অভিযোগে জনদাবির মুখে কিশোরকে মারধর, এরপর যা হলো

 ফরিদপুরে বিক্ষুব্ধ জনতার একাংশ


  • Author,

ইসলামের নবীকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম 'ফেসবুকে কটূক্তিমূলক মন্তব্য' করার অভিযোগে সেনা হেফাজতে নেওয়া ফরিদপুর জেলার সেই কিশোর এখন জেল হাজতে।

যদিও ফরিদপুরের স্থানীয় সাংবাদিক, কলজের শিক্ষক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে যে কিশোরটি দাবি করেছেন– তিনি ওই কটূক্তিমূলক মন্তব্য করেননি, অন্য কেউ করেছে।

এই ঘটনা আজ থেকে দুই দিন আগের। অন্যান্য দিনের মতো সেদিনও ক্লাস করতে গিয়েছিলেন জেলার বোয়ালমারী উপজেলার কাদিরদী ডিগ্রী কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী কিশোরটি।

কিন্তু কলেজে যাওয়ার পর অন্যান্য শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন তিনি এবং মারধরেরও শিকার হন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ওই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে তিনি ইসলাম ধর্মের অবমাননা করেছেন।


শিক্ষার্থী ও আশেপাশের ক্ষিপ্ত জনতা তাকে “মেরে ফেলতে চেয়েছিলো” এবং তখনকার সেই পরিস্থিতি সামাল না দিতে পেরে শেষ পর্যন্ত জনদাবি মেনে তাকে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়।

এদিকে সেনাবাহিনী কিশোরটিকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময়কার কিছু ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে এবং সেখানে সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে এখন জোর সমালোচনা চলছে। যাচাই করে ভিডিওগুলোর সত্যতা পেয়েছে বিবিসি বাংলা।


ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে

ফরিদপুরের স্থানীয় সাংবাদিক মফিজুর রহমান শিপন বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, গত সোমবার কলেজে যাওয়ার পর কিছু শিক্ষার্থী অভিযোগ তোলে যে কিশোরটি ইসলামের নবীকে নিয়ে “এলোমেলো কথাবার্তা” ফেসবুকে লিখেছে এবং “এরপর এ নিয়ে একটা মব তৈরি হয়।”

“কিন্তু ছেলের বক্তব্য, ও অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করে না। ও অস্বীকার করে যে সে এরকম কিছু লিখে নাই। তারপর তারা ওকে থাপ্পড়-টাপ্পড় মারে। পরে তারা রাস্তায় গাড়ি ভাঙ্গে, অবরোধ করে,” তিনি বলেন।

একই বক্তব্য পাওয়া যায় কাদিরদী ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ নুরুজ্জামান মোল্যা’র থেকেও। তিনি ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ঘটনাস্থলেই ছিলেন।

বিবিসি বাংলাকে তিনি জানান যে শুরুতে তিনি ঘটনার ভয়াবহতা বুঝতে পারেননি।

“আমি তখন মাঠেই ছিলাম। দেখি যে ছাত্রদের মাঝে কানাকানি, ছেলেটাকে ঘিরে রাখছে অন্যরা। একটা ছেলে বললো যে ওকে মারবে। কেন মারবে? সাধারণত কলেজে বেঞ্চে বসা নিয়ে, কোনও মেয়ের সাথে কথা বলা নিয়ে রাগারাগি হয়। আমি তাৎক্ষণিকভাবে ওকে আমার রুমে নিয়ে এলাম,” বলছিলেন তিনি।

“পরে জানা গেল, ওর মোবাইল থেকে কুরুচিপূর্ণ ফেসবুক স্টোরি ছড়ায়ে পড়ছে। এ নিয়ে এলাকায় বড় ধরনের ঝামেলা হয়। পুরো কলেজ এরিয়ায় ছাত্র জড়ো হয়ে গেছে।”

তার মতে, তিনি যদি ওই মুহূর্তে এই কিশোরকে না সরাতেন, তাহলে তার প্রাণ হুমকির মুখে পড়তো।

“হাজার হাজার জনতা বলছিলো, আমাদের কাছে ছেড়ে দেন। তাদের একটাই কথা– আমরা ওকে মেরে ফেলবো, নবীর জন্য আমরা জেলে যাবো, দরকারে ফাঁসিতে যাবো।”

কাদিরদী ডিগ্রী কলেজের অবস্থান বোয়ালমারী উপজেলার সাতৈর ইউনিয়নে। কলেজ থেকে ফোন পেয়ে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রাফিউল আলম ঘটনাস্থলে যান। এর আগে তিনি বোয়ালমারী থানার ওসি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকেও (ইউএনও) অবহিত করেন।

বিবিসি বাংলা’র কাছে সেদিনের পরিস্থিতির বর্ণনা দেন এভাবে, “প্রিন্সিপালের রুমে ছেলেটা আছে। সেই দরজা ভাঙ্গার চেষ্টা করছিলো মানুষ। একটাই কথা, মেরে ফেলবে।”

অধ্যক্ষ নুরুজ্জামান মোল্যা জানান, “ও স্বীকার করেছে যে এটা তার পুরনো আইডি ছিল। কিন্তু আইডিটা হ্যাক হয়ে যায়। কমেন্টটা আইডি থেকেই গেছে, কিন্তু সে দেয় নাই। সে বলেছে সে মোবাইল চালায় না।”

সাতৈর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানও বলছিলেন যে সত্য-মিথ্যা “দেখার মতো পরিবেশ পরিস্থিতি তখন ছিল না। সবারই নাজুক অবস্থা। মানুষের একটাই কথা, ও নবী সম্বন্ধে বাজে মন্তব্য করছে।”


তিন শর্ত মেনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ

সাতৈর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে আরও অনেকেই ক্ষুব্ধ জনতাকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন যে “মেরে ফেলাটা ঠিক হবে না”। কিন্তু অনেক অনুরোধের পরও তারা ব্যর্থ হয়েছেন।

ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মি. আলম বলেন, “সবার কথা তো শুনতে পারবো না। তখন আমরা ছাত্রদের তরফ থেকে ১০-১২ জনকে বাছাই করলাম। অনেক ঘটনার পর তারা নিজেদের মাঝে পরামর্শ করলো।”

পরামর্শ করে তারা তিনটি শর্ত দিয়েছেন বলেন জানান তিনি। সেগুলোর মাঝে প্রথম শর্তটাই হলো, কিশোরটিকে “এই অপরাধের জন্য বহিস্কার করতে হবে, যেন সে কোথাও পড়তে না পারে।”

তাদের শর্ত মোতাবেক কিশোরটিকে সবার সম্মতিক্রমে সেদিনই কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কিশোরটি পরে “অন্য কোথাও ভর্তি হতে পারবে কি না, তা শিক্ষা মন্ত্রণালয় বুঝবে” বলেছেন অধ্যক্ষ।

এদিকে, শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় শর্ত ছিল, একজন শিক্ষককেও বহিষ্কার করতে হবে। কারণ “উনি নাকি তাকে সাহায্য করছে। কিন্তু চাইলেই তো বহিষ্কার করা যায় না, তখন ওই শিক্ষককে শোকজ করা হলো।”

এভাবে প্রথম দুই শর্ত বাস্তবায়িত হলো। তৃতীয় শর্তে ছিল, “একজন আলেম বলবে যে এই অন্যায়ের তাৎক্ষণিক বিচার কী হবে। আমরা বললাম, এখন আলেম কই পাবো? পরে তারাই একজনকে আনলো।”

আলেম আসার আগে এর মাঝে তারা সেনাবাহিনীকে কল দিয়েছিলেন বলে জানান মি. আলম।

“হুজুর এলে বললাম, এবার হুজুরের বক্তব্য শুনো তোমরা। হুজুর ওদেরকে বললো, ওর অন্যায় অনুযায়ী এখন ওকে মেরে ফেললা। কিন্তু তাতে সমাধান হলো না। অন্যায়ের পেছনে কারও ইন্ধন আছে কি না, তা দেখা দরকার। তার জন্য পুলিশকে বিশ্বাস না করে আমরা ওকে আর্মির হাতে সোপর্দ করবো।”

উত্তেজিত জনতা শুরুতে ওই তৃতীয় শর্ত মানতে না চাইলেও পরে মেনে নিয়েছেন। এই দর কষাকষি শেষ হতে না হতেই “পাঁচ-ছয় মিনিটের দিকে সেনাবাহিনী চলে আসে।”

কিন্তু কিশোরটিকে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ার ব্যাপারে জনগণ আরেকটি নতুন শর্ত দিয়েছিলো।

তাদের বক্তব্য– “ঠিক আছে, আমাদের সামনে দিয়ে নিবেন। কিন্তু এমনভাবে নিবেন যেন আমরা সন্তুষ্ট হই,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন কলেজের অধ্যক্ষ নুরুজ্জামান মোল্যা।


সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

সেনাসদস্যরা গিয়ে কিশোরটিকে উদ্ধার করেছেন, এই অবধি ঠিকঠাক। কিন্তু উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার যে ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে যে গোলাপি কাপড়ে হৃদয় পালের চোখ বাঁধা।

চারজন সেনাসদস্য তাকে কাঁধে তুলে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। পেছনে উত্তেজিত জনতা। এ ব্যাপারে সাতৈর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বলেছেন, ভিডিও-তে যা দেখা যাচ্ছে, তা মোট জনতার ১০ শতাংশও না। কারণ সেনাবাহিনীর হাতে দেওয়ার আগে সবাইকে ক্যাম্পাসের বাইরে যেতে অনুরোধ করা হয়েছিলো।

ভিডিওগুলো থেকে দেখা যায়, জনস্রোত থেকে চিৎকার করে সেনাবাহিনীকে বলা হচ্ছে, “পায়ে মারেন!” কিংবা, “পাঁচ মিনিটের জন্য আমাদের হাতে দেন।” একজন সেনাসদস্য এলোপাথাড়িভাবে তার কোমরে-পায়ে মোটা লাঠি দিয়ে কিছুক্ষণ পরপর বাড়িও দিচ্ছিলেন।

কিছুদূর এগিয়ে তারা ঐ ছাত্রকে গাড়িতে তোলে। গাড়িতে তোলার পর একজন সেনা সদস্যকে বুট দিয়ে লাথি দিতে ও পায়ের তলায় ফের বাড়ি দিতে দেখা যায়।

ফেসবুকে ওই ভিডিও শেয়ার করে অনেকেই এখন সেনাবাহিনীর আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। ফেসবুকে এ সংক্রান্ত একটি পোস্টে সাগর কুমার নামক একজন মন্তব্য করেছে, “সেনাবাহিনীর লোকজন কীভাবে বুট দিয়ে লাথি মারে, লাঠি পেটা করে? দেশ রক্ষা বাহিনী দেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে পারে না।”

তিথি সরকার নামক একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, “গতকাল সেনাবাহিনী যে ব্যবহার করলো, একটা নাবালককে সবার সামনে কীভাবে চোখ বেঁধে পিটিয়েছে, সেটা সবাই দেখেছে। এখানে নিরপেক্ষ তদন্ত করে সেনাবাহিনীর কতিপয় সদস্যর ও সঠিক বিচার দাবি করছি।”

এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই নেতিবাচক মন্তব্য করলেও ওই কলেজের অধ্যক্ষ মি. মোল্যা মনে করেন, “এটা এক ধরনের আইওয়াশ” ছিল।

“ওই মুহূর্তে জনগণের সন্তুষ্টির জন্য ওনাদের (সেনাবাহিনী) যে কায়দায় নেওয়া লাগে, ওইভাবে নিয়েছে– এটা জনগণকে বোঝানোর জন্য,” বলছিলেন তিনি।

বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলেন, “ওখান থেকে আমাদের তো বের হতে হবে আগে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিলো।”

সাতৈর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মি. মোহাম্মদ রাফিউল আলম বলেন যে পরিস্থিতির কারণে “চারজন আর্মি ওকে মাথায় করে, উপরে তুলে, উঁচু করে তাদের সিস্টেম মতো নিছে।”

এ বিষয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করে ফরিদপুরে সেনাবাহিনীর দায়িত্বশীল কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ঘটনার বর্তমান পরিস্থিতি

সেনাবাহিনী নিয়ে যাওয়ার পর কিশোরটিকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়েছে, জানিয়েছে পুলিশ।

বোয়ালমারী থানার ওসি মো. গোলাম রসুল আজ বুধবার বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আমি যতটুকু জানি, সে জেল হাজতে আছে। ওকে গ্রেফতারপূর্বক কোর্টে সোপর্দ করা হয়েছে।”

মি. রসুল সংক্ষেপে বলেন, “ওর বিরুদ্ধ তদন্ত চলছে। তদন্তের স্বার্থে এখন কিছু বলা যাচ্ছে।”

এদিকে বোয়ালমারী থানার (তদন্ত) ইন্সপেক্টর মো. মজিবর রহমান বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন যে কিশোরটিকে “৫৪ ধারায় চালান করা হয়েছে”।

ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা অনুযায়ী, ওয়ারেন্ট বা গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়াই শুধু সন্দেহের বশবর্তী হয়ে পুলিশ কোনও ব্যক্তিকে সরাসরি আটক করার ক্ষমতা রাখে।

এদিকে এ ঘটনায় কিশোরটির পরিবার ভীতিকর পরিস্থিতির মাঝে রয়েছে। সাতৈর ইউনিয়নের কলেজে ভর্তি হলেও তার বাড়ি হলো পাশের ইউনিয়ন ঘোষপুরে।

ঘোষপুরের চেয়ারম্যান ইমরান হোসেন নবাব বিবিসি বাংলাকে বলেন, সেখানে কিশোরটির ফাঁসির দাবিতে মিছিল, বিক্ষোভ, সমাবেশ, মানববন্ধন হয়েছে।

“কিন্তু বাড়িতে হামলা হয়নি। আমরা কিছু করতে দেই নাই। আমরা স্থানীয় জনগণ আজ তিন রাত ধরে প্রশাসনের সহযোগিতায় পাহারায় ছিলাম। গতকাল রাতেও সারারাত পুলিশ ছিল, আমরাও ছিলাম।”

তিনি আরও বলেন, “স্থানীয় লোকজনকে বুঝাইছি, সে অপরাধী হলে ‘বিধি মোতাবেক’ তার সাজা হোক।”


এ নিয়ে দুইবার ৫৪ ধারায় চালান

এই ঘটনা নিয়ে খোঁজ-খবর করতে গিয়ে জানা যায়, কিশোরটিকে এর আগেও একই অভিযোগে আটক করেছিলো পুলিশ এবং তখনও তাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছিলো।

গত পাঁচ মাস আগে ঘটা সেই ঘটার সময়ও “সাতদিন জেগে জেগে পাহারা দিছি”, বলছিলেন মি. নবাব।

বোয়ালমারী থানার তৎকালীন ওসি “বলছিলো, মামলা দিবে। কিন্তু উনি ৫৪ ধারায় চালান দিছে এবং এই আইডিটা কার, সেটা বের করে নাই। আগের ওসি পুরা জিনিসটা ধামাচাপা দিছে।”

তিনি বলেন, চালানের পর “আবার জামিন নিয়ে বাড়ি ফিরে আসছে। এখন মানুষকে বুঝাইতে গেলে মানুষ আমাদের ওপর উত্তেজিত হয়ে বলছে– তোমরা একবার প্রতারণা করছো, ধামাচাপা দিছো।”

প্রথম যখন পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়, তখন কোনও মামলা হয়েছিলো কি না জানতে চাইলে বোয়ালমারী থানার (তদন্ত) ইন্সপেক্টর মো. মজিবর রহমানও না সূচক উত্তর দেন।

ইউএনও মেহেদী হাসান চৌধুরীও বলেন, “এবার আর্মি নেওয়ার পর পুলিশে দিয়েছে।”

“শুনেছি, পাঁচ মাস আগে ওকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করেছিলো। তখন ওর মোবাইলটা সিআইডি চেক করেছিলো। এরপর জামিন নিয়ে এসেছিলো,” চলতি বছরের জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে এই উপজেলায় যোগদান করেছেন জানিয়ে এ কথা জানান মি. চৌধুরী।

গণপিটুনিতে গুরুতর আহত ওই কিশোরকে পরে সেনাবাহিনী গিয়ে উদ্ধার করেছে।