Monday, December 19, 2011

শীতে দুই জেলায় আরও নয়জনের মৃত্যু ( Please Help to Helpless People in this Winter)

অব্যাহত শৈত্যপ্রবাহে গত ৭২ ঘণ্টায় কুড়িগ্রামে আটজন ও খুলনায় গতকাল রোববার একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকায় শীতজনিত ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। হতদরিদ্র লাখ লাখ মানুষ তীব্র শীতে নাকাল হয়ে পড়েছে। 
প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক, আঞ্চলিক কার্যালয় ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
কুড়িগ্রাম: এ জেলার বিভিন্ন এলাকায় গত ৭২ ঘণ্টায় শীতজনিত অসুস্থতায় আরও অন্তত আটজনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা হলেন: চিলমারী উপজেলার রমনাগ্রামের বদিউজ্জামান (৭০), রৌমারী উপজেরার ফকিরপাড়া গ্রামের আবদুল কাদের (৫৭), নাগেশ্বরী পৌরসভার চামটারপাড় গ্রামের আজিমুদ্দিন (৬২), একই উপজেলার সাতানা গ্রামের জমির উদ্দিন (৬৫), কচাকাটার ইন্দ্রো গ্রামের সোলায়মান (৮৫), চিলমারী উপজেলার পশ্চিম চিলমারী গ্রামের আমুদ্দি (৭৫) ও রাজারহাট উপজেলার মাস্টারপাড়া গ্রামের রহিমা বেওয়া (৬০), এবং উলিপুর উপজেলার হাতিয়ার রামরামপুর গ্রামের মিছির উদ্দিন (৭১)। এ নিয়ে জেলায় গত দুই সপ্তাহে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মুত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ১৩ জনে। 
হাসপাতালগুলোতে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) নজরুল ইসলাম জানান, তীব্র শীতের কারণে হাইপার টেনশন, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও অন্তর্বিভাগে রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। 
এ অঞ্চলের হতদরিদ্র প্রায় আট লাখ মানুষ শীতবস্ত্রের অভাবে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। গতকাল সারা দিন ঘন কুয়াশায় ঢাকা ছিল চারদিক। 
খুলনা: শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে গতকাল খুলনার দাকোপ উপজেলার কালাবগি গ্রামের কালাচাঁদ সরদার (৮১) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে অন্তত ছয় শিশু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও জীবিতেষ বিশ্বাস বলেন, চলতি শৈতপ্রবাহের কারণে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে আজ (গতকাল) সকালে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ছয়টি শিশু ভর্তি হয়েছে। তবে এখন এরা আশঙ্কামুক্ত।
পঞ্চগড়: দেশের সবচেয়ে উত্তরের এ জেলায় শৈত্যপ্রবাহ আর ঘন কুয়াশা ক্রমেই বাড়ছে। এ কারণে জনজীবনে দুর্ভোগও বাড়ছে। দিনের অধিকাংশ সময়ই সূর্যের মুখ দেখা যায় না। দিনের বেলা আকাশ ঘন কুয়াশায় ঢাকা থাকে। রাতে ঝরছে কুয়াশা-বৃষ্টি। এক সপ্তাহ ধরে হাঁড়কাঁপানো শীতে জেলার সব শ্রেণী-পেশা ও বয়সের মানুষের জীবনে অস্বস্তি দেখা দিয়েছে। দিনের বেলা ৭ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ওঠানামা করলেও রাতে তাপমাত্রা আরও নিচে নেমে যায়। শীতে বৃদ্ধ ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি কাহিল হয়ে পড়েছে।
গত দুই দিনের তীব্র শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে আরও ৩০ শিশু পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এরা ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত।
পঞ্চগড় ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস সূত্রে জানা গেছে, শীতের কবল থেকে মানুষকে রক্ষার জন্য দুই হাজার ৩০০ কম্বল জেলার পাঁচটি উপজেলায় বিতরণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আরও ১০ হাজার কম্বল চেয়ে ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সরকারিভাবে শীতবস্ত্র বিতরণ করা শুরু হয়েছে। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই কম। 
এদিকে, তীব্র শীতে আগাম জাতের আলু ও ধানের চারায় কোল্ড ইনজুরি রোগ দেখা দিয়েছে। কৃষি বিভাগ কৃষকদের বীজতলায় ওষুধ স্প্রে করার পরামর্শ দিয়েছে। 
নড়াইল: এখানে দুই দিন ধরে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চলছে। গতকাল সকাল ছয়টার দিকে নড়াইলে ছয় দশমিক শূন্য ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। শীতে সবচেয়ে বেশি বেকাদায় পড়েছে বস্তির বাসিন্দারা। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে এখন পর্যন্ত শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু হয়নি।
জেলা ত্রাণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারিভাবে এক হাজার ১০০ কম্বল পাওয়া গেছে। এখনো বিতরণ শুরু হয়নি। 
সিভিল সার্জন আবদুস সামাদ জানান, শীতের তীব্রতা বাড়তে শুরু করেছে। শীতের কারণে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা হাসপাতালে আসতে শুরু করেছে। 
রংপুর: জেলার ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমান বললেন, ‘শীতার্ত মানুষ ভিড় করছে ঠিকই, কিন্তু কম্বল না থাকলে আমরা কোথা থেকে দেব। ইতিমধ্যে জেলার আট উপজেলা ও তিন পৌরসভায় মাত্র সাড়ে পাঁচ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। ৫০ হাজার কম্বল চেয়ে ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠানো হয়েছে। 
ফরিদপুর: জেলা আবহাওয়া কার্যালয়ের দায়িত্বরত কর্মকর্তা সুরজুল আমীন বলেন, এ জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। গত শনিবার এ মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ৭ রেকর্ড করা হয়। তবে আজ সোমবার থেকে অবস্থার উন্নতি ঘটতে পারে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) অরুণ চন্দ্র মহোত্তম বলেন, গত সপ্তাহে নয়টি উপজেলার শীতার্ত মানুষের মধ্যে তিন হাজার ৭৭২টি কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও পাঁচ হাজার কম্বল চেয়ে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে ফোন করা হয়েছে।
সৈয়দপুর: নীলফামারীর সৈয়দপুরে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। সৈয়দপুর আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা আরও কমবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত তিন দিন ধরে এ অঞ্চলে সূর্যের মুখ দেখা যাচ্ছে না। 
সরকারিভাবে এ উপজেলায় শীতার্তদের মাঝে বিলি করতে ২৫০ ও পৌরসভা এলাকায় ২৮০টি কম্বল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।